ভোটার আইডি কার্ড বা স্মার্ট আইডি কার্ডে তথ্য ভুল এসেছে। ভুল তথ্য সঠিক করতে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত পদ্ধতি জানতে পারবেন এই পোস্টে।
নতুন ভোটার আবেদন করার পর ভোটার আইডি কার্ড পেলে যদি দেখেন আপনার আইডি কার্ডে ভুল তথ্য এসেছে তখন কি করবেন? অবশ্যই সংশোধন আবেদন করার মাধ্যমে ভুল তথ্য সঠিক করে নিতে হবে। কিন্তু, কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে হয় তা অনেকেই জানে না।
ভোটার আইডি কার্ডের ভুল তথ্য কিভাবে সংশোধন করার মাধ্যমে সঠিক করে নিতে হয় তা নিয়ে এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
ভোটার আইডি কার্ডের ভুল তথ্য সংশোধন করার জন্য একটি এনআইডি একাউন্ট থাকতে হবে। যাদের এনআইডি একাউন্ট আছে, তারা একাউন্টে লগইন করে নিন। যাদের একাউন্ট নেই, তারা এনআইডি একাউন্ট রেজিস্টার করার পদ্ধতি পোস্টটি অনুসরণ করে একটি একাউন্ট তৈরি করুন।
একাউন্ট তৈরি করা হলে আমরা সরাসরি সংশোধন প্রক্রিয়ায় যেতে পারবো। তবে, সংশোধন করতে কি কি লাগবে এবং কত টাকা লাগবে তা জেনে রাখা জরুরি।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করতে ২৩০ টাকা, অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে ১১৫ টাকা এবং ব্যক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য একত্রে সংশোধন করতে ৩৪৫ তাকা ফি প্রদান করতে হয়। বিকাশ/নগদ/অনলাইন পেমেন্ট এর মাধ্যমে সংশোধন ফি জমা দিতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন আবেদন করার পর আবেদনটি মোট ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। “ক” ক্যাটাগরির আবেদন অনুমোদন হতে ৭ দিন, “খ” ক্যাটাগরির আবেদন অনুমোদন হতে ১৫ দিন, “গ” ক্যাটাগরির আবেদন অনুমোদন হতে ৩০ দিন এবং “ঘ” ক্যাটাগরির আবেদন অনুমোদন হতে ৪৫ দিন সময় লাগে।
আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করার সময় কী ধরনের তথ্য সংশোধন করতে আবেদন করেছেন তার উপর ভিত্তি করে ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে
ভোটার আইডি কার্ডের ভুল তথ্য সংশোধন আবেদন করার সময় আপনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলো যে সঠিক তা প্রমাণ করার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। আমরা যেহেতু অনলাইনে আবেদন করছি, তাই নিম্নোক্ত তালিকায় উল্লিখিত ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে স্ক্যান কপি নিবেন।
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড
- বোর্ড পরীক্ষার সনদপত্র
- বিয়ের কাবিননামা/তালাকনামা
- ইউটিলিটি বিলের কপি (পানি/গ্যাস/বিদ্যুৎ)
- জমির দলিল পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- বয়স প্রমাণের মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট (সিভিল সার্জন কর্তৃক)
- রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট
- নাগরিক সনদপত্র
উপরোক্ত তালিকায় উল্লিখিত ডকুমেন্টগুলোর মাঝে সবগুলো ডকুমেন্ট লাগবেনা। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। তবে, এই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে স্ক্যান কপি সঙ্গে রাখলে আবেদন করার সময় সমস্যা পোহাতে হবেনা।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে এনআইডি একাউন্টে লগইন করুন। এরপর, প্রোফাইল সেকশনে ক্লিক করুন এবং এডিট বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ১ – তথ্য এডিট
আপনি যে তথ্য সংশোধন করতে চান, সেটিতে টিক মার্ক দিন। এরপর, উক্ত তথ্যের ঘরে সঠিক তথ্য লিখুন। অতঃপর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ২ – তথ্য পরিবর্তন রিভিউ
আপনি কী কী তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করছেন, তা নিচে সংযুক্ত ছবির মতো দেখতে পারবেন। আগের তথ্য এবং বর্তমানে কী পরিবর্তন করেছেন তা এখানে দেখা যাবে। অতঃপর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩ – ট্রানজেকশন বিবরণ
এবার, ট্রানজেকশন ধাপে আসলে আপনার ডিপোজিট করা আছে কিনা তা দেখাবে। আগে থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দিলে এখানে দেখাবে। যদি সংশোধন ফি জমা না দিয়ে থাকেন, তাহলে ০ দেখাবে।

বিকাশ/নগদ/অন্য মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে আইডি সংশোধন ফি জমা দিন। বিকাশের মাধ্যমে ফি জমা দেয়ার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুন —
- বিকাশ অ্যাপ ওপেন করে পে বিল সিলেক্ট করুন
- সরকারি সেবা সিলেক্ট করে NID Service সিলেক্ট করুন
- আবেদনের ধরণ নির্বাচন করুন এবং এনআইডি নাম্বার লিখুন
- পরবর্তী ধাপে গিয়ে পিন নাম্বার এন্টার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন
উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে পেমেন্ট করার পর পেজটি রিফ্রেশ করুন। রিফ্রেশ করলে আপনার ডিপোজিট এর পরিমাণ দেখতে পারবেন। আবেদনের ধরণ এবং বিতরণের ধরণ থেকে সাধারণ আইডি কার্ড নাকি সাধারণ স্মার্ট কার্ড তা সিলেক্ট করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৪ – প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড
এই ধাপে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনের ধরনের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের png, jpg, pdf যেকোনো ফরম্যাট আপলোড করতে পারবেন। ডকুমেন্ট সিলেক্ট করুন এবং আপলোড বাটনে ক্লিক করে আপলোড করুন। এরপর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৫ – আবেদনের তথ্য যাচাই ও সাবমিট
এই ধাপে, আপনার এনআইডি কার্ড সংশোধনের আবেদনটি রিভিউ করে দেখতে পারবেন। কী কী তথ্য পরিবর্তন করেছেন, কী কী ডকুমেন্ট আপলোড করেছেন তা দেখতে পারবেন। অতঃপর, সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি সাবমিট করুন।

তারপর, নিচের ছবির মতো ইন্টারফেস আসবে। এখানে, ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আবেদনের কপিটি ডাউনলোড করে নিন। এটি যেকোনো কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিন। এই প্রিন্ট কপিটি পরবর্তীতে প্রয়োজন হতে পারে।

আবেদন সাবমিট করার পর তথ্যের ধরনের উপর ৭ দিন থেকে ৪৫ দিন সময় লাগবে আবেদনটি অনুমোদন হতে। আবেদন করার পর ক্যাটাগরিতে ভাগ করার পর যদি আরও কোনো তথ্য লাগে তাহলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
তখন আবারও এনআইডি প্রোফাইলে লগইন করে উক্ত তথ্য সাবমিট করতে পারবেন। আপনার আবেদনটি অনুমোদন হলে এসএমএস করে জানানো হবে। অতঃপর, নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
আইডি কার্ড সংশোধন করার পর ভোটার আইডি কার্ড রি ইস্যু আবেদন করার মাধ্যমে সংশোধিত আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।
আবেদন করার পর যদি মনে হয় ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাহলে আপনি চাইলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন বাতিল করার পদ্ধতি পোস্টটি অনুসরণ করে আবেদন বাতিল করতে পারবেন।